টানা এক সপ্তাহের প্রাণান্ত চেষ্টায় সুয়েজ খাল আটকানো দৈত্যাকার জাহাজ এভার গিভেন নড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো পুরোপুরি মুক্ত নয় সেটি। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিলে জাহাজটিকে মিশর ছেড়ে বেরোতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে সুয়েজ কর্তৃপক্ষ। আর সেই ক্ষতিপূরণের অংক হতে পারে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা রাবি গত সপ্তাহে স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া এবং ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত জাহাজটি এখানেই থাকবে।
পৃথিবীর ব্যস্ততম জলপথ মিশরের সুয়েজ খালকে টানা ছয়দিন অচল করে রেখেছিল এই জায়ান্ট কার্গো জাহাজ। এতে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের। জাহাজের মালিক জাপানি নাগরিক শোয়েই কিসেন কাইশাকে ৯০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মিশরের একটি আদালত।
এভার গিভেন নামের কার্গো ভেসেল আটকে এ জলপথ বন্ধ হওয়ার পর যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, সেটি পুষিয়ে নিতেই এ জরিমানা করা হয়েছে জাহাজের মালিককে। এ ক্ষতিপূরণের অর্থের কিছু অংশ ব্যয় হবে জাহাজ মেরামতের কাজেও।
মিশরের আদালত জানায়, ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত এই কার্গো জাহাজটি জব্দ করেই রাখা হবে। শোয়েই কিসেন কাইশা বলেন, ইন্সুরেন্স কোম্পানি আর আইনজীবীদের সাথে আলোচনা চলছে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে।
সরু এ খালপথে জাহাজ আটকে যাওয়ায় টানা এক সপ্তাহ স্থবির হয়ে ছিল এ জলপথ। প্রতিদিনই লোকসান হয়েছে কোটি কোটি ডলার। পেছনে আটকা পড়েছিল পণ্যবাহী আরও ৪০০ জাহাজ। টানা বালু উত্তোলনের পর ২৯ মার্চ এভার গিভেনকে সরানো সম্ভব হয়। ২০১৮ সালে তৈরি হওয়া এ কার্গো জাহাজটি ২২৪ টন ওজনের ২০টি কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষমতা রাখে।
সুয়েজ খাল থেকে বছরে মিশরের প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আয় হয়, যা দেশটির জিডিপির দুই শতাংশের মতো। শুধু মিসর নয়, শত শত কোটি ডলার লোকসানের ভাগিদার হয়েছে ডজন ডজন দেশ এবং হাজার হাজার ব্যবসায়ী।
এর কারণ লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগকারী ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যের একটি লাইফ-লাইন হলো এই খালটি। সুয়েজ খালে মালবাহী জাহাজ ‘এভার গিভেন’ আটকে যাওয়ায় প্রতিদিন ৯৬০ কোটি টাকার পণ্য পরিবহন আটকে ছিল। প্রতি ঘণ্টায় ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি ডলার।