সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড হলো বিটিএস। কে-পপ দল বিটিএস এখন পশ্চিমের দুনিয়ায়ও দারুণ প্রভাবশালী। বিশ্বের অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারা নিয়মিত খবরের বিষয়। তাদের সাফল্যের ঢেউও যেন থামে না।
বিশ্বে নামকরা অনেক শিল্পীই আছেন, যাদের বিশাল বিশাল ফ্যানবেইজ রয়েছে। কিন্তু সেই সকল ফ্যানবেইজের থেকে বিটিএস এর ফ্যানবেইজ একদম আলাদা।
২০১৭ সালে বিলবোর্ড টপচার্ট এওয়ার্ডস এ ফ্যানদের ভোটে বিটিএস সেরা সোশ্যাল আর্টিস্ট পুরুস্কার পায়। সেখানে পাওয়া ভোটের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ কোটি! । এই পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পেছনে ফেলেছে জাস্টিন বিবার, শাওন মেন্দেজ এর মতো তারকাদের। বিটিএস ব্যান্ড এর এই ভক্তদের পরিচিতি ’বিটিএস আর্মি’ নামে।
তবে নানাবিধ আলোচনা সমালোচনা ট্রলের কারণে সময়ের তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ডের তালিকায় বিটিএস। একই সাথে ব্যান্ডের সমর্থকগোষ্ঠি ‘বিটিএস আর্মি’ নিয়েও চলে সমালোচনা।
সেই সমালোচনায় ঘি ঢালতে এবার অনলাইন পিটিশনের আয়োজন করা হয়েছে চেঞ্জ.অর্গ ওয়েবসাইটে।
জানা যায়, সম্প্রতি আফগানিস্তানে চলমান ইস্যু সমাধানের প্রেক্ষিতে “বিটিএস আর্মি” দেরকে আফগানিস্তানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি অনলাইন পিটিশন চালু করা হয়েছে। যেখানে ‘সেন্ড বিটিএস আর্মি টু আফগানিস্তান’ এই শিরোনামে প্রচারণা চলছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, অনেকে দাবি করেন যে বিটিএস আর্মি, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা আর্মি, আমরা মনে করি এটা প্রমাণ করার সময় এসেছে, আমাদের এখন আফগানিস্তানে বিটিএস সেনা পাঠানো উচিত। বিটিএস আর্মি যে কত শক্তিশালী তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে এই পিটিশনে স্বাক্ষর করুন।
অনলাইন পিটিশন কী? আদৌ কোনো কাজে দেয়?
অনেকেই যেরকম মনে করে থাকেন, পিটিশনের মাধ্যমে ২০ বা ৩০ হাজার, কিংবা ১ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিলেই তারা সেটাকে খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন, ব্যাপারটা সব ক্ষেত্রে সেরকম না। এর একটা সহজ কারণও আছে। বিশ্বের অনেকগুলো দেশেই এখনো অনলাইন অ্যাকটিভিজমকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। তাছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে যেহেতু একই ব্যক্তি একাধিক ইমেইল ব্যবহার করে একাধিকবার ভোট দিতে পারে, কিংবা দাবির সাথে কোনো সম্পর্ক নাই এরকম ব্যক্তিও অন্যের অনুরোধে ভোট দিতে পারে, সে কারণেও অনলাইন স্বাক্ষরকে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
কিছু কিছু উন্নত রাষ্ট্রে অবশ্য সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পিটিশনের আয়োজন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যেকোনো নাগরিক হোয়াইট হাউজের উই দ্য পিপল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু অনুমোদিত বিষয়ে পিটিশন চালু করার অধিকার রাখেন। কোনো পিটিশন চালু করার পর যদি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ১৫০টি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে সেটি হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটের সার্চ ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যদি পিটিশনটি ৩০ দিনের মধ্যে ১ লাখ সিগনেচার সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে পিটিশনটির ব্যাপারে একটি জবাব দেওয়া হয়। সে জবাব সে ভোটের পক্ষেই যাবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু তারপরেও এর মাধ্যমে অন্তত এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সরাসরি প্রেসিডেন্টের নজরে না পড়লেও ১ লাখ মানুষের আবেদনটি হোয়াইট হাউজের কোনো একজন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও অনলাইন পিটিশনে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সেখানে যেকোনো নাগরিক যুক্তরাজ্যের সরকারি পিটিশন সাইটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু অনুমোদিত বিষয়ে পিটিশন চালু করার অধিকার রাখেন। ১০ হাজার ভোট সংগ্রহ করতে পারলে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে পিটিশনটির উত্তর দেওয়া হয়। আর ১ লাখ ভোট পেলে সেটিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিতর্কেযোগ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর বাতিল করার জন্য চালু করা পিটিশনটিতে সে সময়ে স্বাক্ষর করেছিল প্রায় পৌনে ছয় লাখ ব্রিটিশ নাগরিক। ফলে জানুয়ারির ১৮ তারিখে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করা হয়, কিন্তু শেষপর্যন্ত অনলাইন আবেদনকারীদের দাবি নাকচ হয়ে যায়।