ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়া এক পান দোকানদারের ছেলের গল্প

ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন মেহেদী হাসান পিয়াল। সব বোর্ড পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। দাদার স্বপ্ন ছিল নাতি একদিন ডাক্তার হবে। সে ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। তার নাতি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন।

মেহেদী হাসান পিয়াল ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর মেদারপাড় আকন্দ বাড়ির আব্দুল কাদের আকন্দ কাজলের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পিয়াল বড়। ছোট ভাইয়ের নাম তুহিন। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।

পিয়ালের বাবা আব্দুল কাদের আকন্দ কাজল পেশায় একজন পান বিক্রেতা। তিনি ত্রিশালে টঙ দোকানে বসে পান বিক্রি করেন।

পিয়াল স্থানীয় শুকতারা বিদ্যানিকেতন থেক জিপিএ-৫ পেয়ে পিএসসি ও জেএসসি পাস করেন। ত্রিশালের সরকারি নজরুল একাডেমি থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ৩০তম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান পিয়াল।

মেহেদী হাসান পিয়াল বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া ও বাবা-মায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলের চেষ্টা ও দোয়ার কারণেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। জাতীয় মেধায় ৩০তম হওয়া অনেক বড় অর্জন।

পিয়াল আরও বলেন, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাবা-মার পরই আমার শিক্ষকদের অবস্থান। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন ক্লাসে খুব চুপচাপ থাকলেও রেজাল্টের কারণেই আমার প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ ছিল। আমার রেজাল্ট সব সময়ই ভালো ছিল ও ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলাম।

সেদিক বিবেচনায় শিক্ষকদের বিশেষ নজরে ছিলাম আমি। তারা আমাকে সব সময় সার্বিক দিক দিয়ে প্রেরণা যুগিয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত বাবা-মায়ের অবর্তমানে শিক্ষকরাই আমার অভিভাবক ছিলেন।

বাবা আব্দুল কাদের তার অভাবের সংসারে দুই ছেলেকেই পড়াশোনা করানোর ব্যাপারে কখনো কৃপণতা করেননি।

তিনি আরও বলেন, ‘সে অধ্যবসায়ী এবং আত্মবিশ্বাসী। তাকে আমি খু্ব কাছ থেকে দেখেছি। আমার বিশ্বাস সে একজন দক্ষ, পরোপকারী ও স্বনামধন্য ডাক্তার হবে।’

পিয়ালের মা মিনারা বেগম বলেন, ‘পিয়াল দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় কোরআন পড়তে শেখে। তখন থেকেই সে নিয়মিত নামাজ পড়ে। তার দাদার স্বপ্ন ছিল পিয়াল ডাক্তার হবে। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আমরা আশাবাদী পিয়াল বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে।’

পিয়ালের বাবা আব্দুল কাদের কাজল বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমত, শিক্ষকদের চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আমরা এজন্য শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

ত্রিশালের সাইন্স ল্যাব শিক্ষা পরিবারের পরিচালক সাজেদুল ইসলাম সাজু বলেন, ‘পিয়াল নবম শ্রেণি থেকে সাইন্স ল্যাব শিক্ষা পরিবারে নিয়মিত পড়াশোনা করত। সে খু্ব বিনয়ী, নম্র-ভদ্র, ধার্মিক। সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।’

শুকতারা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেন আকন্দ বলেন, ‘পিয়াল ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। তার ইচ্ছা ও আগ্রহ দেখে মনে হয় সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।’

এই সম্পর্কিত আরো

সাম্প্রতিক